এক ফুলের মর্ম জানতে হয়
যে ফুলে অটল বিহার বলতে লাগে ভয়।।
ফুলে মধু প্রফুল্লতা, ফলে তার অমৃত সুধা।
এমন ফুল দীন দুনিয়ায় পয়দা জানিলে দুর্গতি যায়।।
চিরদিনে সেই যে ফুল, দীন দুনিয়ার মকবুল।
যাতে পয়দা দীনের রসুল, মালেক সাঁই যার পৌরুষ গায়।।
জন্মপথে ফুলের ধ্বজা, ফুল ছাড়া নাই গুরু পূজা।
সিরাজ সাঁই কয়, এ ভেদ বুঝা লালন ভেঁড়ের কার্য নয়।।
এই গানের ভাবার্থ মূলত আধ্যাত্মিক ও দর্শনভিত্তিক। এটি একজন সাধকের অন্তর্দৃষ্টি ও উপলব্ধিকে প্রকাশ করে, যেখানে “ফুল” একটি গভীর প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
গানের ভাবার্থ বিশ্লেষণ:
- ফুলের গভীর তাৎপর্য:
- ফুল এখানে সাধারণ কোনো ফুল নয়; এটি এক আধ্যাত্মিক জ্ঞানের প্রতীক, যা অর্জন করলে মানুষের মোহ-মায়া কেটে যায়।
- “যে ফুলে অটল বিহারী বলতে লাগে ভয়” এটি বোঝায় যে এই ফুল এতই গুরুত্বপূর্ণ ও মহিমান্বিত যে, এমনকি বড়ো বড়ো সাধক বা জ্ঞানীরাও একে শ্রদ্ধার চোখে দেখেন।
- ফুলের মাহাত্ম্য:
- “ফুলে মধু প্রফুল্লতা, ফলে তার অমৃত সুধা।”
- ফুল এখানে পরম সত্য, আধ্যাত্মিক সুখ ও মুক্তির প্রতীক। যিনি এ ফুলের সুধা পান করতে পারেন, তিনি সত্যকে উপলব্ধি করেন এবং মুক্তির পথ খুঁজে পান।
- ফুল ও রাসুলের সম্পর্ক:
- “যাতে পয়দা দিনের রাসুল, সে ফুলতো সামান্য নয়।”
- এখানে রাসুল (পয়গম্বর) এর মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে এই ফুল কোনো সাধারণ বস্তু নয়; এটি ঈশ্বরপ্রাপ্তির বা আধ্যাত্মিকতার প্রতীক।
- গুরু ও ফুলের সম্পর্ক:
- “ফুল ছাড়া নয় গুরু পূজা।”
- আধ্যাত্মিক জ্ঞানের মাধ্যমে সত্যের সন্ধান করতে হয়। গুরুকে শ্রদ্ধা করা এবং তার নির্দেশিত পথে চলার মাধ্যমে সেই “ফুল” পাওয়া সম্ভব।
- শেষ চরণে লালন ও সিরাজ সাঁইয়ের দৃষ্টিভঙ্গি:
- “সিরাজ সাঁই কয় এ ভেধ বুঝা, লালন ভেড়োর কার্য নয়।”
- অর্থাৎ, এই গভীর সত্য বোঝা সহজ নয়, সাধারণ মানুষের পক্ষে এটি উপলব্ধি করা কঠিন। কেবল জ্ঞানী ও সাধকেরাই এর প্রকৃত রূপ বুঝতে পারেন।
মূল ভাবার্থঃ
এই গানটি মূলত আধ্যাত্মিক জ্ঞানের মাহাত্ম্য প্রকাশ করছে, যেখানে “ফুল” জ্ঞান, মুক্তি, রাসুলের দীক্ষা ও গুরু-শিষ্যের সম্পর্কের প্রতীক। এই ফুল পাওয়া মানে প্রকৃত সত্য উপলব্ধি করা, যা সাধারণ মানুষের পক্ষে সহজ নয়। এটি মূলত সাধক-পরম্পরা, গুরু-শিষ্য সম্পর্ক এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞানের গভীরতা বোঝানোর একটি গান।
