একজন শিল্পী যখন কোনো সংগীতদলের সদস্য হয়, তখন সে শুধু একটি ব্যান্ডে যুক্ত হয় না, সে যুক্ত হয় কিছু মানুষের অনুভূতির সাথে, কিছু সম্পর্কের সাথে, এবং একটি নির্দিষ্ট ধারা বা আবহের সাথে। সেখানে সে বাজনা শেখে, পরিবেশনা করে, বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। সময়ের সাথে সেসব জায়গা হয়ে ওঠে তার পরিচয়ের অংশ।
কিন্তু মানুষ বদলায়, হৃদয়ের সুর বদলায়। কখনো কখনো শিল্পীর ভেতরের আত্মা চুপিসারে ডাকে নতুন কোনো রেওয়াজে, অন্য কোনো গানের আবহে, আরও গভীর বা আপন কোনো অভিজ্ঞতায়। তখন সেই শিল্পী যদি নিজের ভেতরের ডাকে সাড়া দিতে চায়, তবে কী সে বেঈমান হয়?
এই প্রশ্নটি আসলে আমাদের সবার।
দ্বিধার জন্ম হয় যেখানে, সেখানে সঙ্গীত হয় না
বহু সময় দেখা যায়, একদল মানুষ বিশ্বাস করে একজন সদস্য একবার যদি তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়, তবে সে যেন চিরতরে তাদেরই হয়ে গেল। তার অন্য কোথাও যাওয়ার মানেই যেন ‘পালিয়ে যাওয়া’ বা ‘বিশ্বাসঘাতকতা’। অথচ বাস্তবতা হলো, সঙ্গীত কোনো শৃঙ্খল নয়। এটি আত্মার প্রকাশ। যেখানেই শিল্পী তার আত্মা শান্তি অনুভব করে, সেখানেই তার গান।
কিন্তু এই সরল সত্য যখন সম্পর্কের আবরণে ঢাকা পড়ে, তখন গড়ে ওঠে ‘অন্তর্দলীয় দ্বন্দ্ব’। তখন আর গান থাকে না শুধু গান হিসেবে; থাকে অভিযোগ, দলীয় সিদ্ধান্ত, অনুমতি, মিটিং, প্রেসার, নীরব বিদ্রুপ।
অন্য দল থেকে প্রস্তাবনা: অনৈতিক, না প্রকৃত স্বীকৃতি?
অনেকেই মনে করেন, এক শিল্পীকে অন্য দল থেকে বাজানোর প্রস্তাব দিলে সেটা অন্যায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো একজন শিল্পী কি কোনো ব্যান্ডের মালিকানাধীন? যদি সে সম্মান সহকারে সেই প্রস্তাব পায়, এবং তার হৃদয় সাড়া দেয়, তাহলে সে কেন সেখানে যেতে পারবে না? শিল্পী মাত্রই স্বতন্ত্র। তার আত্মার গান কোনো গণ্ডির ভেতরে বাঁধা পড়ে না।
শিল্পীর সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা
সবচেয়ে কঠিন জায়গায় পড়ে শিল্পীটি নিজেই। একদিকে তার পুরনো দলের প্রতি আবেগ, কৃতজ্ঞতা, অপরাধবোধ। অন্যদিকে তার অন্তরের গভীর থেকে ওঠা সেই নতুন সুরের টান।
যদি সে সবাইকে খুশি রাখার চেষ্টা করে, তবে সে হয়তো কারোই না হয়ে যায়। আর যদি সে নিজের ভেতরের ডাকে সাড়া দেয়, তবে হয়তো কিছু সম্পর্কের বাইরে যায়। তবুও সত্যিকারের শিল্পীর উচিত নিজের হৃদয়ের দিকে তাকানো।
একটা গান যদি হৃদয়ের সাথে না মেলে, তবে তা হাজার মানুষের সামনে গাইলেও ব্যর্থ হয়।
দল নয়, সুরটাই সত্যিকারের আশ্রয়
একজন শিল্পীকে কখনো দলে রাখা যায় না, তাকে রাখা যায় সম্মানে, ভালোবাসায়, এবং স্বাধীনতার স্বীকৃতিতে।
একটি গানের দল তখনই সত্যিকারের দলে পরিণত হয় যখন তারা জানে,
“তুই যদি অন্য কারো সঙ্গেও বাজাস, তবুও তোর সুরে আমাদের ভালোবাসাই বাজবে।”
এখন প্রশ্ন হলো, কে সঠিক?
সঠিক হলো সেই, যে কারো উপর জোর খাটায়নি।
সঠিক হলো সেই, যে শিল্পীর স্বাধীনতাকে শ্রদ্ধা করেছে।
সঠিক হলো সেই, যে গানের চেয়ে দলে বড় হতে চায়নি।
আর সঠিক হলো সেই, যে শেষমেশ নিজের হৃদয়ের ডাক শুনেছে।