চার পকেট নয়, এক অন্তরই যথেষ্ট: বাবু ভাইয়ের জন্য একটি চিঠি

বাবু ভাই,

গতকাল রাতে আপনার সাথে দেখা হয়ে যাওয়াটা যেন সময়ের এক বিশেষ ইঙ্গিত ছিল। আমরা গানের রেওয়াজ শেষ করে একটু গলা ভেজাতে গিয়েছিলাম পরিবহন মার্কেটে, আর আপনি এলেন, যেন একা রাতের নিঃশব্দতায় টাকার প্রতিধ্বনি তুলে ধরতে।

আপনার কথাগুলো এখনো কানে বাজে,
চার পকেটে অফুরন্ত টাকা থাকতে হবে। তাহলেই মানুষ পাশে থাকবে, তাহলেই ভালোবাসবে সবাই।

আপনার অভিজ্ঞতা কম নয়, দেশ-বিদেশ ঘুরেছেন। এমন এক বৃদ্ধকে দেখেছেন যিনি ৩০টা ক্রেডিট কার্ড ভর্তি ওয়ালেট দেখিয়ে বলেছিলেন, “পয়সাই সব।”
আমি ভাবি, পয়সাই যদি সব হয়, তাহলে সেই বৃদ্ধ লোকটি এখন কোথায়? তার এই জীবনের গল্প কেউ কি গভীর মন দিয়ে শোনে?

সেই বৃদ্ধ লোকটির মত আপনিও নিশ্চয় বিশ্বাস করেন অর্থই হচ্ছে সেই চাবিকাঠি যা দিয়ে জীবনের সব দরজা খোলা যায়।
কিন্তু আমি জিজ্ঞেস করতে চাই,
যদি সেই দরজার ওপাশে কেউ না থাকে? যদি আপনার পকেট ভরে, কিন্তু মন ফাঁকা থেকে যায়? তখন কী করবেন?

বাবু ভাই, আপনি জানেন তো, মানুষ একা জন্ম নেয়, একা মরে যায়। জীবনের সবচেয়ে গভীর মুহূর্তগুলোতে যেখানে জন্ম, মৃত্যু, প্রার্থনা, প্রেম; সেখানে টাকা পাশে দাঁড়ায় না। দাঁড়ায় মানুষ, ভালোবাসা, সম্পর্ক, আর একটা সত্য অনুভব: আধ্যাত্মিক সংযোগ

আমরা সবাই দৌড়াচ্ছি,
কে কত পয়সা কামাতে পারি, কে কোথায় পৌঁছাতে পারি, কে কতটা ‘সেটেল’ হতে পারি।
কিন্তু কেউ কি নিজের ভেতরের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করি,
“আমি আসলে কে? আমি কীসের জন্য বেঁচে আছি?”

আপনার কথায় মনে হলো, আপনি বিশ্বাস করেন অর্থই জীবনের মূল চালিকাশক্তি।
তবে আমি মনে করি, অর্থ যখন দাস হয়, তখন তা আশীর্বাদ।
কিন্তু যখন আমরা অর্থের দাস হয়ে যাই, তখন তা অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়।

আপনি কি জানেন বাবু ভাই, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ধনী মানুষরা ঘুমাতে পারেন না।
তাঁদের ঘরে টাকা আছে, কিন্তু চোখে ঘুম নাই, মনে শান্তি নাই।

আর এক বৃদ্ধ, যার হয়তো উপার্জন সামান্য;
সে সন্ধ্যায় পরিবারের পাশে বসে চা খায়, পাখির ডাক শোনে, নিঃশব্দে হাসে।

নিজের অন্তর শুদ্ধ না থাকলে বাইরের সমস্ত আরাম একসময় ভার হয়ে দাঁড়ায়।

আত্মশুদ্ধি মানে শুধুই উপবাস, দান-সদকা, তসবিহ-তিলাওয়াত বা ধ্যান নয়।
এটা হচ্ছে এমন এক প্রক্রিয়া, যেখানে আপনি নিজের ভেতরটা পরিষ্কার করতে শিখেন।
নিজের ভ্রান্ত চিন্তা, লোভ, রাগ, ঈর্ষা এগুলো চিনতে পারেন এবং সেইগুলোর ঊর্ধ্বে ওঠার চেষ্টা করেন।

এই পথটা কঠিন, কিন্তু এই পথেই আপনি বুঝবেন
জীবন কেবল টাকার খেলা নয়, বরং আত্মার এক গভীর যাত্রা।

আমরা যখন গান গাই, গল্প বলি, বা নিঃশব্দে বসে থাকি,
তখনও আমরা আত্মশুদ্ধির পথে হেঁটে চলি।
এটা এক ধরণের সাধনা, যেখানে মানুষ নিজের আসল রূপ খুঁজে বেড়ায়।

আপনি কি জানেন বাবু ভাই…

আত্মশুদ্ধি কখনো টাকার বিপক্ষে নয়।
আত্মশুদ্ধি বলে,
টাকার গোলাম হয়ে যেও না, বরং তা দিয়ে ভালো কিছু কর।
যতটা প্রয়োজন, উপার্জন করো।
কিন্তু সেই প্রয়োজন যেন অন্তরের প্রয়োজন হয়, বাহ্যিক প্রতিযোগিতা নয়।

এই মুহূর্তে আপনার পাশে যারা আছে,
তারা আপনার হৃদয়ের কাছে কতোটা স্থান পাচ্ছে, সেটা টাকা দিয়ে মাপা যাবে না।
একজন মনের মানুষ চার পকেট ভর্তি পয়সার থেকেও বেশি মূল্যবান।

আপনি যখন বললেন, “অর্থই ভালোবাসা নিয়ে আসে”,
তখন আমি ভাবলাম,
ভালোবাসা যদি টাকায় আসে,
তাহলে তো সেই ভালোবাসা স্বার্থযুক্ত, বিনিময় যোগ্য।

আত্মশুদ্ধির পথ বলে, “ভালোবাসো বিনিময়ের জন্য নয়, ভালোবাসো কারণ তুমি ভালোবাসতে পারো”।

চলেন, জীবনের পথে নতুন করে যাত্রা শুরু করি।
এইবার একটু ভিন্নভাবে, ভিন্ন সুরে।
যেখানে টাকার ঝংকার নয়,
আছে অন্তরের আলাপন,
আছে একটি পরিচ্ছন্ন হৃদয়ের দরজা খুলে দেওয়ার সাহস।

আপনার স্নেহের,
নওসাদ

Leave a Comment

Let’s make something new, different and more meaningful or make thing more visual or Conceptual ? Just Say Hello ! Contact Icon