সঙ্গীত জগতে প্রতিটি বাদ্যযন্ত্রের নিজস্ব ভাষা আছে। আর এই ভাষার মূলে রয়েছে টিউনিং, সঠিক স্কেলের সাথে বাদ্যযন্ত্রের ধ্বনিকে মানিয়ে নেওয়ার কৌশল। সঙ্গীত যতটা আবেগের, ঠিক ততটাই বিজ্ঞান ও ছন্দের সমন্বয়। আজ আমরা আলোচনা করবো D এবং E স্কেলে গান করলে নাল, হাত বায়া, এবং ঢোল সেই স্কেল অনুযায়ী কীভাবে টিউন করবো, যেন পারফেক্ট হরমোনি তৈরি হয়।
১. নাল টিউনিং: মূল সুরের সাথে সঙ্গতি
নাল একটি বায়া বা ঢোলক জাতীয় যন্ত্রের ডানদিক, যেখান থেকে হাই পিচ সাউন্ড বের হয়। নাল মূলত সুরের “তালা” যা পুরো সঙ্গীতের মেরুদণ্ড ধরে রাখে।
D স্কেলের জন্যঃ
- নাল (ডান দিক): D (কারণ গান D স্কেলে, নাল এখানে মূল সুরের ভিত্তি)।
- বায়া (বাঁ দিক): A, G, বা F# (এরা D স্কেলের সহায়ক নোট যা গভীরতা ও ভারসাম্য আনে)।
E স্কেলের জন্যঃ
- নাল (ডান দিক): E
- বায়া (বাঁ দিক): B, A, বা G#
কেন? কারণ, নাল যদি মূল স্কেলের সা (root note) তে থাকে, তবে তা গানের সুরের সঙ্গে মিশে গিয়ে তালকে প্রাঞ্জল করে তোলে।
২. হাত বায়া টিউনিং: গভীরতা ও ভারসাম্যের ছায়া
হাত বায়া একটি একতরফা বেস টোন তৈরি করা যন্ত্র, যা ঢোলকের বাঁদিকের অংশ বা আলাদাভাবে তৈরি করা বায়ার মত।
- D স্কেলের ক্ষেত্রে, হাত বায়া টিউন করবেন A, G বা F# নোটে।
- E স্কেলের ক্ষেত্রে, হাত বায়া টিউন করবেন B, A, বা G# নোটে।
কারণ?
- A এবং B হলো যথাক্রমে D ও E এর পঞ্চম সুর (পঞ্চম নোট), যা সঙ্গীতে শক্তি ও ভারসাম্য দেয়।
- G এবং G# চতুর্থ বা তৃতীয় ধ্বনি হিসেবে আবেগ ও গভীরতা আনে।
হাত বায়ার সঠিক টিউন গানের দলের বেজ এর ফাউন্ডেশন নির্ধারণ করে। তাই এই টিউনিং কেবল সঠিক সুর নয়, পুরো পরিবেশনার আবহ বদলে দিতে পারে।
৩. ঢোল টিউনিং: তাল ও তালে প্রাণ
ঢোল, দুই দিকবিশিষ্ট এক প্রাচীন ও জনপ্রিয় যন্ত্র। এর ডানদিক থেকে আসে হাই পিচ, আর বামদিকের বায়া থেকে আসে লো পিচ। সঠিকভাবে টিউন করা না হলে ঢোলে কেবল আওয়াজ হয়, সুর নয়।
D স্কেলের জন্য ঢোলঃ
- দায়াঁ (ডান দিক): D
- বায়া (বাঁ দিক): A বা G
E স্কেলের জন্য ঢোলঃ
- বায়াঁ (ডান দিক): E
- বায়া (বাঁ দিক): B বা A
কেন?
নাল যখন স্কেলের মূল নোটে (Root) থাকে, তখন তা কণ্ঠ বা যন্ত্রের সাথে মিলিয়ে তাল ধরে। বায়া যখন চতুর্থ বা পঞ্চম সুরে টিউন করা হয়, তখন তা ছন্দে ভারসাম্য আনে এবং তালের গভীরতা বাড়ায়।
প্রযুক্তির সহায়তা: টিউনার অ্যাপ
বর্তমানে gStrings, Chromatic Tuner কিংবা Boss Tuner এর মতো অ্যাপ দিয়ে মোবাইল থেকেই প্রতিটি নোট শনাক্ত করা যায়।
- আপনি যখন বায়া বা নাল বাজাবেন, তখন অ্যাপ আপনাকে দেখাবে সেটি কোন ফ্রিকোয়েন্সিতে বাজছে (যেমন: D = 293 Hz, E = 329 Hz, A = 220 Hz)।
- এই ফ্রিকোয়েন্সি দেখে আপনি বুঝতে পারবেন টিউন সঠিক হয়েছে কি না।
শেষকথা
বাদ্যযন্ত্রের টিউনিং হচ্ছে সঙ্গীতের আত্মা। নাল, হাত বায়া বা ঢোল যে যন্ত্রই হোক না কেন, তা যদি মূল স্কেলের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়, তবে গান হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। মনে রাখবেন, সঠিক টিউন কেবল শ্রোতার কানই নয়, বাদকের হৃদয়ও স্পর্শ করে।