কলা

চারুকলা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। সন্ধ্যা সাতটা তিন মিনিট। প্রতিদিনের মত আজও আতিক বাবুর বরাদ্দকৃত ডংকিতে বসে নওসাদ 555 জ্বালাতেই অর্জুন ফার্স্ট কল দিল, ১৬। অনেকদিন পর ভাস্কর ফিরে এসেছে। বরাবরের মতই ছয় তারে চারুকলার বাতাসে এক ধরনের মাদকতা ছড়িয়ে দিচ্ছে। আশা, মাফিন, অনামিকা, কিং, শুভ, সিয়াম, রুহী এবং আতিক বাবু সহ আরো অনেকেই বসে আছে।

বুলবুল এসেই বাঁশির ব্যাগ খুলে ডি স্কেলের বাঁশি খুঁজতে শুরু করল। অর্জুন কাহনে কাহারবা না বাজালেও রাইফ ঠিকই মন্দিরা বাজাচ্ছে। শিফাত বেজিস্ট হলেও আজ তার হাতে ইউক। সাকিব খমক বাজাতে বাজাতে হঠাৎ গান ধরল__ “মন ছাড়া কি মনের মানুষ রয়…”।

গানটা একজন মিউজিশিয়ানের কাছে এতটাই ভাল লাগল যে অর্জুন গানটা রেকর্ড না করে থাকতে পারল না। ফোনে রেকর্ডিং চালু করতেই প্রক্টর আসলেন। গান শেষ হওয়া অব্দি তিনি অপেক্ষা করলেন এবং গান শেষে বুলবুলের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ

  • প্রক্টরঃ তুমি যেন কোন হলের সহ-সভাপতি?
  • বুলবুলঃ স্যার, শহীদ হাবিবুর রহমান হল।
  • প্রক্টরঃ তোমাকে আমি খুবই স্নেহ করি। তোমরা গান-বাজনা কর দেখে খুবই ভাল লাগে। ব্যান্ড অনেস্বর চারুকলার সংস্কৃতি ধরে রেখেছে। তোমরা এখানে গান-বাজনা কর জন্যই জায়গাটা চারুকলা ফিল হয়।
  • বুলবুলঃ তবে স্যার, এখানে কিছু ছাগল আসে মাঝেমধ্যে। এরা মনে করে চারুকলা ঘাস-লতাপাতা খাবারই জায়গা। এরপর এরকম কাউকে পেলে আপনাকে জানাবো।
  • প্রক্টরঃ তোমাদের জন্যই ক্যাম্পাস এখনো নিরাপদ। সবারই সহোযোগিতা কাম্য।
  • বুলবুলঃ অবশ্যই স্যার। আরেকটা গান শুনবেন?

আরো একটা গান শুনে প্রক্টর তার এগারো সদস্যদের টীম নিয়ে রওনা দিতেই সবাই আবারো গানে ফিরে গেল। একের পর এক গান হতে লাগল এবং প্রায় সবগুলোই লোকগান__ মাটির গান, মানুষের গান, হাসন রাজার গান, লালন এর গীত।

একসময় এশার আজান শুরু হল। সবাই গান-গল্প বন্ধ করে ক্যানটিনের দিকে রওনা দিল। সবারই চায়ের তৃষ্না পেয়েছে। শুধু আশা বলল, “তোরা এখান থেকে চলে যাবার সময় কেউ একজন আমাকে ডেকে নিয়ে যাস ভাই। অনেক ক্লান্ত আমি, এখানেই ঘুমালাম”। এই কথা শুনে কিং বলল__ আমি তাহলে চা খেতে না গিয়ে বরং তোকে সঙ্গ দিই। আশা “হ্যা”, “না” কিছুই না বলে ডংকিতে শুয়ে পড়ল।

চা খেতে খেতে অনেস্বর এর সদস্যরা সঞ্চিতা ২৬ ব্যাচের ব্যাচ ডে প্রোগ্রামের জন্য ট্র‍্যাক লিষ্ট সাজিয়ে নিল। ট্র‍্যাকলিষ্ট এমনভাবে সাজানো হল যেন সবাই গাইতে পারে, নাচতে পারে। নওসাদ ক্যান্টিনে বসেই ট্রেলোতে প্ল্যান সাজিয়ে নিল। প্রোগ্রামে যে গানগুলো করা হবেঃ

  1. নিতাই চাঁদের বাজারে
  2. বাজি
  3. বকুল ফুল
  4. পিঠা পুলির গান
  5. চিলতা বাতাস
  6. রসিক যে জন
  7. দিলোনা দিলোনা
  8. অভাগার বাসর

প্রোগ্রামের আগে মোট তিনটি কাজ করতে হবেঃ ১) ব্যানার এবং পোষ্টার ডিজাইন করতে হবে, ২) সোশ্যাল মিডিয়ায় এনাউন্সমেন্ট করতে হবে এবং ৩) মার্কেটিং ক্যাম্পেইন রান করতে হবে।

ক্যান্টিন থেকে মঞ্চে ফেরার পথে নওসাদ খেয়াল করল সঞ্চিতা ২৬ ব্যাচের ছেলে-মেয়েরা রাত জেগে তালপাতা দিয়ে মঞ্চ সাজাচ্ছে, পরম মমতায় রঙিন কাগজ কেটে আঠা দিয়ে দড়িতে লাগাচ্ছে। সবার মধ্যে এক ধরনের উৎসব উৎসব ভাব। দেখেই যে কারো মন ভাল হয়ে যায়। বেঁচে থেকে আনন্দ হয়।

সবাই ক্যান্টিন থেকে ফিরে আসতেই আবারো গান শুরু হল। প্রোগ্রামের আগেই ট্র‍্যাক লিষ্টের সবগুলো গান কাভার করতে হবে। কাল সন্ধ্যায় প্রোগ্রাম। কাল আর সময় পাওয়া যাবেনা। আড্ডার সাথে সাথে রাত বাড়তে থকল। মস্ত বড় চাঁদ লাল আভা নিয়ে তালগাছের মাথার ওপর উঁকি দিল।

পরদিন সন্ধ্যা ছয়টায় সবাই মঞ্চ এর পেছনে একত্রিত হল। পাঞ্জাবী এবং শাড়ি পড়ে সবাইকে অসাধারণ লাগছে। একদল তরুন-তরুনী বাদ্যযন্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে আছে। কি অপূর্ব সেই দৃশ্য! তারপরও কি যেন একটা মিসিং মনে হতেই সাকিব বলে উঠল, “এইতো, অনেস্বর এর আর্টিস্ট চলে আসছে”।

প্রোগ্রামের দিন সাকিব ভুল করে সুরমা ফেলে আসায় আশা এসেই সবাইকে কাজল পড়িয়ে দিল। যারা পাগড়ী পড়তে চাইল রুহী তাদের মাথায় পাগড়ী বেধে দিল। অনামিকা সবাইকে এক এক করে পর্যবেক্ষণ করে জানাল সবকিছুই পারফেক্ট। এই মানুষগুলোর জন্যই অনেস্বর এর সবাই সতঃস্ফূর্তভাবে পারফর্ম করতে পারে। প্রোগ্রামের আর অল্প কিছুক্ষণ বাকী ঠিক এমন সময় বুলবুল এসে বাঁশির ব্যাগ হাতে নিল এবং ডি স্কেল এর বাঁশি খুঁজতে খুঁজতে সবাইকে রেডী হতে বলল।

একসময় মাইক এ অনেস্বর এর নাম ঘোষণা হতেই একদল ছেলেমেয়ে হাততালি দিয়ে উঠল। নওসাদ সবাইকে নিয়ে মঞ্চে উঠল। শুধু সাকিব মঞ্চের নীচে সাউন্ড ব্যালেন্স করতে গেল। সাউন্ড এতটাই পারফেক্ট ব্যালেন্স হল যে প্রতিটি মানুষ গানের সাথে মেতে উঠল। আরো একবার মুখরিত হল চারুকলা!

To Be Continued…

Leave a Comment

Let’s make something new, different and more meaningful or make thing more visual or Conceptual ? Just Say Hello ! Contact Icon